ঢাকা,রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে ঠাণ্ডাজনিত রোগি বাড়ছে

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার :
শীত আসার সাথে সাথে কক্সবাজারে ঘরে ঘরে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগীরা ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও চিকিৎসকদের চেম্বারে। শীতের শুরুতেই সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত সর্দি, কাশি ও জ্বরে।
তবে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এ রোগের প্রভাব বেশি দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো শিশু আবার আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়ায়। মৌসুমি এসব রোগ শিশু আর বৃদ্ধদের বেশি হলেও এতে আক্রান্ত রোগী ও অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড় কাটা, পরিবেশ দূষণ, রাস্তায় ধুলোবালিসহ বাতাসে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসের কারণেই বেড়েছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ। তবে সামান্য চিকিৎসায় এসব রোগ সেরে যায় বলেই জানিয়েছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শীতের শুরুতেই সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হয় ঠান্ডাজনিত সর্দি, কাশি ও জ্বরে। শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এ রোগের প্রবণতা দেখা দেয় বেশি, আর ঝুঁকিও রয়েছে তাদের। কোনো কোনো শিশু আবার আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়ায়।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে জ্বর, হাঁপানী, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শুন্য থেকে শুরু করে প্রায় বৃদ্ধসহ শত শত রোগি চিকিৎসারত রয়েছেন।
কর্তব্যরত নার্সরা জানান, শীতের শুরু থেকে প্রতিদিন নিউমোনিয়া, জ্বর, হাঁপানীসহ বিভিন্ন ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩০-৪০ জন করে শুধু শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জানা গেছে, ঠা-াজনিত ও বাচ্চাদের নিউমোনিয়ার কারনে বিভিন্ন রোগীদের কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ছাড়াও জেলা ও শহরের বেসরকারী ক্লিনিকগুলোতে ভর্তি করানো হচ্ছে।
জেলার নিম্নবিত্ত পরিবারের রোগীরা বেশি টাকা খরচ করতে না পারায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট সীটের তুলনায় দ্বিগুন রোগী বৃদ্ধি রয়েছে। রোগীদের সীট দিতে না পারায় একটি সীটে ২জন করে রোগী রেখেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা।
এতে শিশু ওয়ার্ডে ৪০ জনের ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত ৩৬ জন রোগিসহ মোট ৭৬ জন শিশুই ছিল ঠান্ডা, নিউমোনিয়া ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে শিশু মেডিসিন রয়েছে ৬০ জন। তাছাড়া রোহিঙ্গা রোগিও আসছে প্রতিনিয়ত।
এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে, নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের সচেতনতা ও সাধারণভাবে চিকিৎসা দিতে না পারার ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করায় বেশি।
চিকিৎসা নিতে আসা শহরের সমিতিপাড়া থেকে শিশু ফারহানার এর মা হাবিবা জানান, তার সন্তানের বয়স ১১ মাস। গতকাল থেকে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বুকে প্রচ- কফ ও ঠা-া জনিত রোগের কারনে। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার থেকে শিুশুর ঝুঁকি রয়েছে বলে দস্তখত নিয়ে ভর্তি করিয়েছেন। এখন পরীক্ষা করে দেখছি আবার নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে।
এ রকম সদরের রামুর গর্জনিয়া থেকে আসা আব্বাস উদ্দিন জানান, তার ১ বছরের ভাগিনা শাহরিয়ারের শ্বাসকষ্ট থাকায় গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় মেডিকেল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওষুধ খেলেও ভালো হয়নি। তাই জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
সদর হাসপাতাল ছাড়া এরকম ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতাল, ইউনিয়ন হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতালসহ বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঠা-া রোগির অবস্থা আরো ভয়াবহ বলে জানা গেছে।
জেলা শহরের আল ফুয়াদ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় দেখা গেছে, বিশেষজ্ঞ শিুশু চিকিৎসক ডা: নুরুল করিম খাঁন ও এমএস জামান এর চেম্বারে শিশু রোগি ও অভিবাবকদের প্রচুুর ভীড়। ঠাই নেই রোগির। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত চিকিৎসকরা যথাসময়ে চিকিৎসা দিতে না পেরে হিমশিমও খাচ্ছে। আবার অনেক রোগি ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে সিরিয়াল না পেয়ে ফেরতও যাচ্ছে। ডাক্তার সহকারী আজিজ জানান, প্রতিদিন প্রচুর রোগির ভীড়। রোগি দেখতে দেখতে রাত ১/২ টা বেজে যায়।
শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: এমএস জামান জানান, ঠা-ার কারণে অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়ে। শীতের কারণে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস ও চামড়ার রোগও বেড়ে যায়। বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে ডায়রিয়া দেখা দেয়। ডায়রিয়া হয় রোটা ভাইরাসের কারণে। মায়ের দুধ শিশুর পুষ্টি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে সর্দি-কাশি শিশুকে সহজে আক্রান্ত করতে পারে না এবং নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা সহজ হয়।
এই ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো: আশিকুর রহমান জানান, শীতের শুরুতে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও নবজাতকরা ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। তবে শিশুদের বেলায় ৩টি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কোনো শিশুর সর্দি-জ্বরের সঙ্গে কাশি, বুকে ঘ্যাড় ঘ্যাড় শব্দ হয় আর যদি শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তবে অবশ্যই ওই শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
আর কক্সবাজারে এখন শিশু রোগির সাথে বয়স্ক ঠাণ্ডাজনিত রোগির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জেলা সদর হাসপাতালে সবাইকে সাধ্যমতো সেবা দিতে সচেষ্ট রয়েছে।

পাঠকের মতামত: